এই পোস্টে আমরা জানব কিভাবে আপনি আপনার ব্লাড প্রেসার কন্ট্রোল করতে পারবেন এবং এর মাধ্যমে আপনি আপনার হার্টকে সুস্থ রাখতে পারবেন এবং সর্বোপরি আপনার জীবনে পজিটিভ চেঞ্জ নিয়ে আসতে পারবেন। চলুন শুরু করি
সূচিপত্র
কিছু সহজ লাইফস্টাইল চেঞ্জ
আপনি জানেন কি? আপনার প্রতিদিনের রুটিনের ছোট ছোট সামান্য কিছু পরিবর্তন আপনার হাই ব্লাড প্রেসার কন্ট্রোলের ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। আপনি কি খাচ্ছেন, কিভাবে চলাচল করছেন, কিভাবে আপনার স্ট্রেস কন্ট্রোল করছেন এসকল বিষয়ে স্মার্ট চয়েজ করার মাধ্যমে আপনি আপনার সুস্বাস্থ্যের কন্ট্রোল নিতে পারেন। চেষ্টা করুন আপনার প্রতিদিনের খাবারে ফলমূল ও সবুজ শাকসবজি, হোল গ্রেইন (বার্লি, ব্রাউন রাইস, রেড রাইস, গম, কর্ণ/ভুট্টা ওটসমিল) ইত্যাদি রাখতে। এছারা মাছ, মুরগি বিভিন্ন ধরনের হেলদি ফ্যাট যেমন বাদাম, অ্যাভোকাডো ইত্যাদি খেতে পারেন। গরুর মাংস, অতিরিক্ত স্পাইসি খাবার, বাইরের জাঙ্ক ফুড, ফাস্টফুড, কোল্ডড্রিংকস ইত্যাদি যতটা কম খাওয়া যায় ততই ভালো। প্রসেসড ফুড ও লবণ যতটা পারুন কম খান।
হার্টের জন্য কিছু এক্সারসাইজ
এক্সারসাইজ মানে শুধু জীমে যাওয়া না, এর মানে এমন কিছু করা যা আপনি নিজে করতে পছন্দ করেন এবং একইসাথে তা যেন আপনার হার্টও সচল রাখে। হতে পারে কোনো পার্কে হাঁটা, জগিং করা, আপনার প্রিয় গানে নাচা, আপনার প্রিয় আউটডোর খেলাটি যেমনঃ ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন ইত্যাদি খেলা কিংবা হতে পারে ঘরের গৃহস্থালি কাজগুলো। খুজে বের করুন কোন কাজটা আপনার ভাল লাগে এবং যে কাজে আপনার শারীরিক পরিশ্রম হয় তাই করুন এবং একে আপনার প্রতিদিনকার রুটিনের অংশ করে ফেলুন। চেষ্টা করুন প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট এই ধরনের মডারেট এক্সারসাইজ করতে এবং নিজেই ফীল করুন আপনার এনার্জি লেভেল কি পরিমাণ চেঞ্জ হয় এবং নিজেকে কতটা সতেজ ও প্রাণবন্ত মনে হয়।
স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট
আমাদের জীবনে স্ট্রেস থাকবেই। কিন্তু এই স্ট্রেসকে যদি আপনি কন্ট্রোল করতে পারেন তো তা আপনার ব্লাড প্রেসার কমাতে এবং একইসাথে আপনার মেন্টাল হেলথ ভালো রাখতেও সাহায্য করবে। প্রতিদিন নিজেকে রিলাক্স ও শান্ত রাখতে কিছুটা সময় দিন। এ সময় আপনি চাইলে ডিপ ব্রিদিং এক্সারসাইজ করতে পারেন, আপনার প্রিয়জনদের সাথে সুন্দর সময় কাটাতে পারেন, কিংবা আপনার হবির পিছনে সময় দিতে পারেন, মুভি দেখতে পারেন, আপনার পছন্দের আউটডোর খেলাগুলো খেলতে পারেন, বন্ধুদের সাথে সময় কাটাতে পারেন কিংবা চাইলে আপনার ধর্ম অনুযায়ী ধর্মীয় কাজগুলো করতে পারেন। মোটকথা, যাই আপনাকে আপনার মনের ভেতর থেকে শান্ত করবে, রিলাক্স করবে, আপনার দুশ্চিন্তা, হতাশা, রাগ, ক্ষোভ ইত্যাদি থেকে আপনাকে মুক্ত রাখবে তাই করুন। এর মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই আপনার স্ট্রেস ম্যানেজ করে ফেলতে পারবেন।
স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট আপনার বা আপনার প্রিয়জনের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা আপনার বা আপনার প্রিয়জনের শারীরিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করবে। তাই আজ থেকেই এই সহজ উপায়গুলো ফলো করে আপনার বা আপনার প্রিয়জনের স্ট্রেস ম্যানেজ বা কন্ট্রোল করুন।
মেডিকেশন ম্যানেজমেন্ট
কিছু কিছু মানুষের হাই ব্লাড প্রেসার কন্ট্রোলের জন্য শুধুমাত্র তাদের লাইফস্ট্যাইল চেঞ্জই যথেষ্ট নয়। সেক্ষেত্রে তাদের জন্য তখন আলাদা করে মেডিকেশনের প্রয়োজন হয়। যদি আপনার ডক্টর আপনাকে কোনো মেডিসিন দেয় কিংবা কোনো নির্দেশনা দেয় তবে আপনার দায়িত্ব তখন আপনার ডক্টরকে পুরোপুরি মান্য করা। অর্থাৎ আপনার ডক্টরের সাজেস্ট করা প্রতিটি মেডিকেশন অক্ষরে অক্ষরে আপনার ফলো করা উচিত। এইসকল মেডিকেশন ঠিক তখনি সবচেয়ে ভালো কাজ করবে যখন আপনি সম্পূর্ণ সুস্থবোধ করলেও আপনার ডক্টরের সাজেশন অনুযায়ী আপনার মেডিসিন বা মেডিকেশনের সম্পূর্ণ কোর্স কমপ্লিট করবেন।
আমাদের দেশের অনেক মানুষের মধ্যেই এই জিনিসটি দেখতে পাওয়া যায় যে তারা কোনোরকম সুস্থবোধ করার সাথেসাথেই তাদের ডক্টরের প্রেসক্রাইবড মেডিসিন খাওয়া কিংবা নির্দেশনা মানা পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। অবশ্যই মনে রাখবেন, আপনার ডক্টর তার মনের ইচ্ছামতো আপনাকে মেডিসিন দেয়নি। আপনার প্রপার মেডিকেশনের জন্য ঠিক যতটুকু প্রয়োজন ঠিক তততুকুই আপনাকে প্রেসক্রাইব করেছেন। তাই যদি আপনার প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী মেদিসিনের কোর্স কম্পপ্লিট না করেন তো আপনার সেই রোগের জীবাণু আপনার শরীরেই বিদ্দমান থাকবে এবং অচিরেই তা আপনাকে আর বেশি অসুস্থ করে দিবে। আর তখন আপনার এই আগের মেডিসিনও আগের মতো পারফর্ম করতে পারবে না।
বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিকের ক্ষেত্রে এই ব্যাপারগুলো আর বেশি সতর্কতার সাথে ফলো করবেন। মেডিক্যাল সাইন্সের ভাষায় “অ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্ট” অর্থাৎ শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ না করার অন্যতম কারন হচ্ছে এই অ্যান্টিবায়োটিকে কোর্স কমপ্লিট না করা কিংবা যখন তখন যেকোনো সমস্যায় ডক্টরের পরামর্শ ছারাই অ্যান্টিবায়োটিক মেডিসিন কনজিউম করা। যদি আপনি আপনার মেডিকেশনের কোনো সাইড ইফেক্ট ফিল করেন কিংবা আপনার মেডিকেশন সম্পর্কে যেকোনো দুশ্চিন্তা/প্রশ্ন থাকলে কোনোরকম হেজিটেশন ছারাই আপনার ডক্টরের সাথে কথা বলুন। তিনি নিঃসন্দেহে আপনাকে হেল্প করবেন।
নিয়মিত মনিটর করা এবং ডক্টরের সাথে যোগাযোগ রাখা
ঘরে বসে নিয়মিত আপনার বা আপনার প্রিয়জনের ব্লাড প্রেসার মনিটর করা এবং লাইফগার্ড বাংলাদেশ থেকে প্রভাইড করা ‘ব্লাড প্রেসার লগ’এ আপনার ব্লাড প্রেসারের রিডিংগুলোর ট্র্যাক রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে করে আপনি আপনার বা আপনার প্রিয়জনের শারীরিক অবস্থা জাজ করতে পারবেন, আপনার বা তাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে ভ্যালুয়েবল ইনসাইটস আপনার কাছে থাকবে এবং এই ব্লাড প্রেসার রিডিং এর লগ দেখে আপনি আপনার বা আপনার প্রিয়জনের ট্রিটমেন্ট প্ল্যান কতটা সঠিকভাবে কাজ করছে সে সম্পর্কেও ধারনা পাবেন। নিয়মিত ডক্টরের কাছে গিয়ে হেলথ চেকআপ করুন এবং আপনার ডক্টরের পরামর্শ অনুযায়ী ট্রিটমেন্ট প্লানে কোনো পরিবর্তন দরকার হলে তা করুন। আমরা বিশ্বাস করি আপনার ডক্টরও আপনার সুস্বাস্থ্যের পার্টনার। তাই যেকোনো শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ডক্টরের কন্সাল্টেসন নিতে হেজিটেড ফিল করবেন না।
মেনে নিন
আপনার কিংবা আপনার প্রিয়জনের ব্লাড প্রেসার কন্ট্রোলের ক্ষেত্রে দৃঢ়টা ও ধারাবাহিকতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সঠিকভাবে আপনার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান মেনে চললে, এর আগে সাজেস্ট করা লাইফস্ট্যাইল চেঞ্জগুলো গুরুত্বের সাথে আপনার এবং আপনার প্রিয় মানুষগুলোর জীবনে নিয়ে আসতে পারলে ধরে নেওয়া যায় আপনি আপনার এবং আপনার প্রিয় মানুষগুলোর হার্ট এবং সর্বোপরি সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে অ্যাক্টিভ রোল পালন করছেন। নিজের এবং নিজের আপনজনদের সুস্বাস্থ্যের উদ্দেশে আপনার এইসব রেসপন্সিবল কার্যক্রমের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এবং শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
মনে রাখবেন, আপনার প্রতিটি পজিটিভ চয়েস, আপনাকে এবং আপনার প্রিয়জনদের সুস্বাস্থ্যের দিকে একধাপ করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এটা অবশ্যই গর্ব করার মতো ব্যাপার।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও হাই ব্লাড প্রেসার একটি সিরিয়াস হেলথ প্রব্লেম। কিন্তু শুধুমাত্র সঠিক নলেজ ও সাপোর্ট এর সাহায্যে আপনিও পারেন আপনার সুস্বাস্থ্যের কন্ট্রোল আপনার হাতে নিতে এবং আপনার আপনজনদের সাথে সুস্থ সুন্দর আনন্দময় জীবন কাটাতে। তাই চলুন আর দেরি না করে আজ থেকেই আমাদের জীবনে কিছু পজিটিভ চেঞ্জ নিয়ে আসি এবং একসাথে সুস্থ থাকার এই জার্নিতে একটু একটু করে এগিয়ে যাই।